মহান আল্লাহ মানুষকে ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছি এ জন্য যে, তারা আমার ইবাদত করবে।’ (সুরা জারিয়াত ৫৬) আর এই ইবাদতের ধারাবাহিকতা থাকবে মৃত্যু পর্যন্ত। যেমনটি কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তোমার প্রতিপালকের ইবাদত করো।’ (সুরা হিজর ৯৯)
রমজানের মতো মহিমান্বিত একটি মাস আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো এই মাসে ইবাদত করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই ইবাদতের ধারাবাহিকতা পরবর্তী মাসগুলোতেও চলমান রাখতে হবে। আমরা যেসব ইবাদত করেছি সেগুলোর অনুশীলন চলমান রাখতে হবে এবং রমজান থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার চর্চা করতে হবে। রমজান আমাদের যে শিক্ষাগুলো দিয়েছে সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।
ইখলাস : রোজা আমাদের ইখলাস তথা একনিষ্ঠতার শিক্ষা দিয়েছে। কারণ এতে লোক দেখানোর মতো কোনো আমল ছিল না। কেউ চাইলে গোপনে কিছু খেয়ে রোজা ভাঙার অনেক সুযোগ ছিল। শুধু এক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পানাহার থেকে বিরত থেকেছে। এ জন্য হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘রোজা আমার জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।’ (সহিহ মুসলিম)
তাকওয়া : রোজার মূল যে শিক্ষা সেটা হচ্ছে তাকওয়া। কোরআন মাজিদেও মহান আল্লাহ এমনটি বলেছেন। রমজান মাসে সাধারণত সব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা হয় এবং বান্দা নেক আমলের প্রতি আগ্রহী হয়। এ জন্য পরবর্তী মাসগুলোতেও এই আমল অব্যাহত রাখতে হবে।
সিয়াম : রমজানের অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে রোজা রাখা। দীর্ঘ একমাস আমরা রোজা রেখেছি। সারা বছর এর অল্প কিছু হলেও জারি রাখা প্রয়োজন। এজন্য প্রত্যেকে সুন্নত ও নফল রোজাগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করা। বিশেষ করে আইয়্যামে বিজ, শাওয়ালের ছয় রোজা, প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার চেষ্টা করে।
কিয়াম : রমজান মাসে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে তারাবির নামাজ পড়েছি। রমজান পরবর্তী সময়ে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। ফরজ নামাজের পাশাপাশি সুন্নত ও নফল নামাজগুলো আদায় করা। যেমন সকাল বেলা ইশরাকের নামাজ আদায় করা। যার ফজিলত হিসেবে হাদিসে একটি হজ ও ওমরাহর পরিপূর্ণ সওয়াবের উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া আওয়াবিন, তাহাজ্জুদসহ সব সুন্নত ও নফল নামাজ আদায়ের চেষ্টা করা।
সুশৃঙ্খল জীবনযাপন : পূর্ণ একটি মাস পরিপূর্ণ নিয়মের মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে। সময়মতো রুটিন করে খাওয়া, নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, ইসতেগফার সবকিছুই নির্ধারিত সময়েই সম্পাদিত হয়েছে। এটা মুমিন জীবনের সফলতা লাভের অন্যতম একটা দিক। এই শিক্ষাকে আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। যেকোনো আমল সর্বদা জারি রাখা কেন প্রয়োজন এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘মহান আল্লাহর কাছে প্রিয় আমল হচ্ছে, যা সর্বদা করা হয়, যদিও তা অল্প হয়।’ (সহিহ বুখারি) এ জন্য আমাদের আমলগুলোতে ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। আর অবশ্যই পাশাপাশি গুনাহকে পরিপূর্ণভাবে বর্জন করতে হবে। তাহলেই রমজানের শিক্ষা সাফল্যে পদার্পণ করবে। মহান আল্লাহ আমাদের সারা বছর রমজানের মতো একনিষ্ঠভাবে আমল করার তওফিক দান করুন। আমিন।