Sunday, April 20

‘ডিপিডিসি মগবাজারে কর্মরত আরও একজন ভাই কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন! হয়তো একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে গেল। এতে সমস্যা নেই স্থায়ী চাকরিরত কর্মকর্তাদের। মৃত্যু ব্যক্তির পরিবার পাবেনা কোনো সুবিধা। কারণ, মৃত্যু ব্যক্তি চাকরি করতেন আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে। হয় সবাই কে স্থায়ী করুন, না হয় সবাইকে আউটসোর্সিং এর আওতায় আনুন। বুঝতে পারবেন যন্ত্রণা কাকে বলে। টাকাও নেই সম্মানও নেই। আল্লাহ ভাইকে জান্নাত দান করুন। আমিন।’

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) দপ্তরের সিএসএস লাইনম্যান হিসেবে কর্মরত কামরান হোসেন বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যাওয়ায় প্রকৌশলী মো. মোহাব্বত হোসেন তার ফেসবুক আইডি তে এভাবে তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন। কামরান হোসেনের মৃত্যুতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে মৃত্যুর ঘটনা তদন্তপূর্বক কারণ নির্ধারণসহ দায়ীদের চিহ্নিতকরণ এবং গৃহীতব্য ব্যবস্থার সুপারিশ সহ সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়। অপরদিকে ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তন্ত কমিটির আহ্বায়ক বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব মো.শরীফুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, আমরা এ ব্যাপারে শিগগিরই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করবো। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনই সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে চাই না।

জানা যায়, ডিপিডিসির মগবাজার ডিভিশনে কর্মরত সিএসএস লাইনম্যান কামরান হোসেন গত বুধবার ১৫/১৫ পশ্চিম রামপুরা ঠিকানায় নতুন সংযোগ দিতে গেলে বিদ্যুতায়িত হন এবং অজ্ঞান হয়ে মই-এ ঝুলে থাকেন। এরপর তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে মগবাজার ডিভিশনের কর্মকর্তারা এবং সিএসএস ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আইনি ঝামেলা এড়াতে তড়িঘড়ি করে পোষ্টমর্টেম ছাড়াই কামরান হোসেনের লাশ তার পরিবারের কাছে দাফনের জন্য বুঝিয়ে দেয়। এর আগেও একাধিকবার কর্মরত অবস্থায় বিদ্যুতায়িত হয়ে সিএসএস কর্মচারী নিহত হয়েছেন। বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলেও দোষীদের বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে না কার্যকরী তেমন কোনো ব্যবস্থা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিপিডিসির একজন প্রকৌশলী জানান, ডিপিডিসিতে এর আগেও একাধিকবার বিদ্যুতায়িত হয়ে সিএসএস কর্মীরা মারা গেছেন। মৃত্যুর ঘটনার পরই তদন্ত কমিটি হয়, কিছুদিন পর দায়সারা গোছের রিপোর্টও জমা দেয়া হয় কিন্তু কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা আর হয় না। এসব মৃত্যুর ব্যাপারে যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে বলে দাবি ওই প্রকৌশলীর।

তিনি বলেন, সিএসএস কর্মীদের এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে ডিপিডিসি কিংবা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে মৃত ব্যক্তির পরিবারকে কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে না, যা খুবই বেদনাদায়ক।

এ বিষয় ডিপিডিসির তত্ত্বাবাধক প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বলেন, আমি বিষয়টি জানি না। কী হয়েছে এ বিষয় বিস্তারিত বলতে পারবেন মগবাজার ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহে আলম। তিনি ঘটনা সব জানেন। কীভাবে মিটারম্যানের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ভালো বলতে পারবেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

এসব বিষয় ডিপিডিসি মগবাজার ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (অ.দা) মাহে আলমের সাথে যোগাযোগের একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অভিযোগ রয়েছে, প্রকৌশলী মাহে আলম ডিপিডিসি মুগদা ডিভিশনে কর্মরত থাকাকালে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। গ্রাহকের নতুন সংযোগ প্রদান, মিটার টেম্পারিং সহ নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগে প্রকাশ।

ডিপিডিসির মগবাজার ডিভিশন সূত্রে জানা যায়, এক সিঙ্গেল ফেইজ বিদ্যুৎগ্রাহকের বাসায় থ্রি ফেইজ মিটার পরিবর্তন করতে গিয়েছিল কামরান। বিদ্যুতের প্রধান সঞ্চালন লাইন বন্ধ না করেই খুঁটিতে উঠে সঞ্চালন লাইনে গ্রাহকের তার পরিবর্তন করতে গিয়েই তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরে রামপুরার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ডিভিশনের প্রকৌশলীরা জানান, কামরানের মরদেহ পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুরে দাফনের জন্য মরদেহ নিয়ে যায় কামরানের স্বজনেরা।

হাসপাতালে মৃত কামরানের পরিবার অভিযোগ করেছেন, কামরান তামিম ইন্টারন্যাশনালের হয়ে কাজ করছিলেন। বিকেলে মগবাজারের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী মাহে আলমের নির্দেশে তিনি মগবাজার এলাকায় কাজ করতে যান। লাইন বন্ধ না রেখে কাজ করানোর কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। নিহত কামরানের পরিবার ও সহকর্মীদের অভিযোগ, ওই নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বহীনতায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যুৎলাইন সচল থাকা অবস্থায় কামরানকে কাজ করতে বলা হয়েছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিটারম্যান বলেন, ‘আমাদের জীবনের দাম নেই। নির্বাহী প্রকৌশলী মাহে আলম স্যারের নির্দেশে কোনো প্রকার নিয়ম নীতি না মেনেই সংযোগ দেওয়া হয়। যেখানে ছিল না কোনো প্রকার লাইনম্যানের জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম।’

এ ব্যাপারে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নুর আহমদ বলেন, ঘটনায় কারো দায়িত্বহীনতা থাকলে সেটি তদন্তে বেরিয়ে আসবে। ইতোমধ্যে উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুব শিগগিরই দুর্ঘটনার কারণ জানা যাবে। কেউ দায়ী থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি এবং মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছে। তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।

উল্লেখ্য, এর আগে রাজধানীর শাহবাগ থানার পিজি হাসপাতালের পেছনের রাস্তায় গত ২৩ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় বিদ্যুৎ লাইনে কাজ করার সময় মই থেকে পড়ে জাহিদ (৩৫) নামে এক সিএসএস লাইনম্যানের মৃত্যু হয়েছে। আবার গত ২১ অক্টোবর সন্ধ্যা ছয়টায় মানিকনগর এলাকায় উচ্চচাপ (এইচটি ক্যাবল) বিদ্যুৎলাইনের তার পরিবর্তনের কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সিএসএস’র এক বিদ্যুৎকর্মী নিহত ও দুইজন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তি হলেন সিএসএস বিদ্যুৎ লাইনকর্মী (ফোরম্যান) মো. নবীর হোসেন। আহতরা হলেন, মাসুম মিয়া ও রবিউল ইসলাম। এ ঘটনায় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ ওঠে।

Share.
Leave A Reply