নওগাঁ প্রতিনিধি: মাত্র ছয় মাস বয়সি ছেলেকে ঘরে রেখে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের আন্দোলনে বন্ধুদের নিয়ে রাজপথে নামেন কারখানাশ্রমিক বায়েজিদ বোস্তামি। গত বছরের ৫ আগস্ট কারফিউ ভেঙে ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। ঢাকার আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ২৪ বছর বয়সি বায়েজিদ।
নিহত হওয়ার পর পুলিশের গাড়িতে রেখে ঘটনাস্থলেই বায়েজিদসহ ১৩টি লাশ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এ কারণে শহীদ বায়েজিদের লাশটি একনজর দেখারও সুযোগ হয়নি পরিবারের কোনো সদস্যের।
শহীদ বায়েজিদ বোস্তামি নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার উমার ইউনিয়নের কৈগ্রাম এলাকার মৃত সাখাওয়াত হোসেনের ছেলে। স্ত্রী রিনা আক্তার ও বায়েজিদের ঘরে আলো করে আসা শিশুসন্তানটির নাম মো. রাফি আব্দুল্লাহ। বর্তমানে তার বয়স এক বছর। ছোট্ট শিশু রাফি আব্দুল্লাহ এখনো বুঝতে শেখেনি তার বাবা আর পৃথিবীতে নেই। অন্যদিকে বায়েজিদকে হারিয়ে দিশাহারা অসহায় পরিবারটি।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উত্তরা আইডিয়াল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পাস করেন শহীদ বায়েজিদ। ঢাকার আশুলিয়া এলাকার একটি কারখানায় খণ্ডকালীন চাকরি করতেন। সেখানে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন তিনি। গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে আশুলিয়া থানা এলাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। পরে শহীদ বায়েজিদ বোস্তামিসহ ১৩ জনের লাশ পুলিশের গাড়িতে রেখে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সেনাসদস্যরা সেখান থেকে লাশগুলো উদ্ধার করে শহীদি জানাজা শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। ৭ আগস্ট ধামইরহাট উপজেলার কৈগ্রাম এলাকায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বায়েজিদের দাফনকাজ সম্পন্ন হয়।
এ বিষয়ে বায়েজিদের বড় ভাই কারিমুল ইসলাম জানান, গরিব-অসহায় পরিবারে আমাদের জন্ম হয়েছে। দুই ভাই এক বোন অনেক কষ্টে বড় হয়েছি। বায়েজিদ ছিল আদরের ছোট ভাই। এই প্রথম ভাইকে ছাড়া ঈদ গেছে আমাদের। সে পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকত। তবুও সে পরিবারের জন্য মাঝেমধ্যে সাধ্যমতো খরচের টাকা পাঠাত।
কারিমুল ইসলাম আরো বলেন, ভাই মারা যাওয়ার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি সামাজিক সংগঠনগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমাদের পরিবারকে সহযোগিতা করেছে। আমাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
ভাই হারানোর বেদনা সবাই বুঝতে পারবে না উল্লেখ করে কারিমুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাইকে খুনের সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাই।’
বায়েজিদের মা বেনু আরা আমার দেশকে বলেন, আন্দোলন শেষে হয়তো অনেকেই যে যার মতো করে বাবা-মায়ের কাছে ফিরেছে কিন্তু আমার ছেলে আর কোনোদিন ফিরে আসবে না। আমার ছেলেসহ সব শহীদের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার চাই। সন্তানহারা মা হিসেবে হয়তো দ্রুত সন্তানের বিচার দেখবÑ এমন প্রত্যাশা নিয়ে বেঁচে আছি।