জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারিতে ছিল রিতা আক্তার। স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হয়ে দেশের সেবা করার পাশাপাশি পরিবারের হাল ধরার। ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয় এই তরুণী। ফলে তার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল।
রিতার বাড়ি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের তালখুর গ্রামে। তার বয়স হয়েছিল ১৭ বছর। বাবা আশরাফ আলী রিকশাচালক। মা রেহেনা বিবি গৃহিণী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সে ছিল মেঝ। পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় রিতা ছিল পরিবারের একমাত্র আশা-ভরসা।
রিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সে বাবা-মাকে সব সময় বলত, বড় হয়ে ডাক্তার হবে, পরিবারের হাল ধরবে। মেয়েকে একটু ভালোমতো পড়াশোনার সুযোগ তৈরি করে দিতে সাধ্যের সব চেষ্টা চালাতেন বাবা-মা। মা রেহেনা বিবি বাসাবাড়িতে কাজ করে আয়ের সেই টাকায় মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতেন।
রেহেনা বিবি বেদনাহত কণ্ঠে বলেন, মেয়েকে আর ফিরে পাব না জানি। কিন্তু আমার মেয়েসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত সবাই যেন শহীদি মর্যাদা পায়। তাহলে মেয়েকে হারানোর বেদনা কিছুটা হলেও লাঘব হবে। গ্রামের মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করে এ বছরই ঢাকার মিরপুর দুয়ারীপাড়া সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল সে। মেয়ের লেখাপড়ার সুবিধার্থে পরিবারের সবাই ঢাকায় চলে আসি।
জানা যায়, ৫ আগস্ট সকালে আশরাফ আলী বের হয়ে যান রিকশা নিয়ে, রেহেনা যান কাজে। এ সুযোগে রিতা ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে চলে যায় মার্চ-টু-ঢাকা কর্মসূচিতে। দুপুরে রেহেনা ঘরে ফিরে দেখেন মেয়ে নেই। খুঁজতে বের হন। আশপাশে অনেক খোঁজাখুঁজির পর কোথাও পেলেন না মেয়েকে। সন্ধ্যা পর্যন্ত মেয়ের খোঁজ না পেয়ে মেডিকেল কলেজগুলোর মর্গে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এক মেডিকেল থেকে আরেক মেডিকেল দৌড়াদৌড়ি করে রাত ১০টার পর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের মর্গে মেয়ের মরদেহ পান। গায়ের জামাকাপড় দেখে মেয়েকে শনাক্ত করতে পারেন তিনি।
আহত রিতাকে মেডিকেলে নিয়ে আসা ব্যক্তিদের কাছ থেকে রেহেনা জানতে পারেন, রিতার মাথার এক পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল। তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল নিয়ে এলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা পেতে বিলম্ব হয়। ডাক্তার যখন রিতার চিকিৎসা করতে যান ততক্ষণে আর বেঁচে নেই রিতা। পরদিন মেয়ের মরদেহ নিয়ে বাবা-মা চলে যান গ্রামের বাড়ি। গ্রামের কবরস্থানে রিতাকে দাফন করা হয়।