ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কদমতলীর খালপাড় এলাকায় যৌতুকের জন্য দুই বছর আগে গরম তেল ঢেলে পুড়িয়ে গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগের মামলায় স্বামী মিজান সরদারকে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
আজ রবিবার ঢাকার ৪ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুন্সি মো. মশিয়ার রহমান এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আসামির মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড করেছেন আদালত।
সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর এরশাদ আলম (জর্জ) বলেন, রায় ঘোষণার সময় আসামি মিজান সরদারকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। রায় শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, মিজান সরদারের সঙ্গে ১০ বছর পূর্বে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মিম আক্তার রুপা। তাদের একটি পুত্র সন্তান এবং কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে মিজান রুপাকে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের জন্য মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতো।
মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে জাহাঙ্গীর আলম মিজানকে ২০ লাখ টাকা দিয়ে জমি কিনে দেন এবং সাত লাখ টাকা দিয়ে একটি দোকানও করে দেন রূপার পরিবার। এরপর সে আরও যৌতুক দাবি করে। যা রুপা পরিবার থেকে এনে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাই মিজান রুপার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বাড়িয়ে দেয়। তবে ভিকটিম দুই সন্তানের কথা চিন্তা করে তা সহ্য করে।
২০২৩ সালেন ৬ মে রাত ১০টার দিকে মিজান কেরানীগঞ্জের কদমতলীর খালপাড় এলাকার বাসায় রুপাকে যৌতুকের জন্য চাপ দেয়। রুপা যৌতুক দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে রুপা দুই সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
রাত ৩টার দিকে মিজান সয়াবিন তেল গরম করে এনে রুপার শরীরে ঢেলে দেয়। এতে তার শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়। তার দুই সন্তানও কিছুটা দগ্ধ হয়। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই বছর ২৫ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রুপা।
এ ঘটনায় যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে রুপার বাবা জাহাঙ্গীর আলম ৯ মে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেন। রুপা মারা যাওয়ার পর মামলাটি যৌতুকের জন্য হত্যা মামলায় রুপান্তরিত হয়।
মামলাটি তদন্ত করে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সাব-ইন্সপেক্টর শরজিৎ কুমার ঘোষ ওই বছরের ৩১ জুলাই আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।মামলার বিচার চলাকালে আদালত চার্জশিটভূক্ত ১৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।