বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির সমর্থনে মদন উপজেলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টা থেকে মদন সরকারি কলেজ মোড়ে জড়ো হতে থাকে। একই সঙ্গে পুলিশও সেই স্থানে অবস্থান নেয়। ঐ দিন সকাল ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা একটি মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদের দিকে আসতে থাকে। পুলিশ ডাক বাংলো মোড়ে ব্যারিকেড দেয়। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গেই শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে পাবলিক হলের দিকে রওনা হয়।
একই সময় আন্দোলনের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করে আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। দু’টি মিছিল উপজেলা খাদ্য গুদামের সামনে মুখোমুখি হলে প্রশাসন ছত্রভঙ্গ করে আলাদা করে দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা শহীদ আব্দুল কদ্দুছ মগড়া সেতুর পূর্ব পাড়ে অবস্থান নেয়। এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে যোগ দেয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন মেহেদী হাসান নবাব। এ ছাড়াও সেই সময় আরো ১২/১৩ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশত মানুষ আহত হয়।
এমনি একজন টগবগে যুবক মেহেদী হাসান নবাব। নেত্রকোনার জেলা শহরের একটি কলেজে অনার্সে অধ্যয়নরত। স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে পুলিশের চাকরি করবে। কিন্তু পুলিশের বুলেটেই সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল নবাবের। ২৪ এর জুলাই আন্দোলনে পুলিশের বুলেট কেড়ে নিয়েছে তার এক চোখের দৃষ্টি। টাকার অভাবে চিকিৎসা না হওয়ায় আরেক চোখের দৃষ্টি নিভে যাওয়ার পথে।
নেত্রকোনার মদন উপজেলার চানগাঁও ইউনিয়নের মৈধাম গ্রামের খোকন মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসান নবাব। ৫ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। সে অনেকটা ডানপিটে স্বভাবের। ২৪ এর জুলাই আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল খুবই সক্রিয়। আন্দোলনে তার একটি চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে। এর সাথে চিকিৎসার জন্য ব্যয় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ নিয়ে নিজেকে সে এখন পরিবারের বোঝা মনে করছে।
মেহেদী হাসান নবাব বলেন, স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে পুলিশের চাকরি নিব। কিন্তু পুলিশের বুলেটে আমার সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। আমার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। চিকিৎসার অভাবে আরেকটি চোখ নষ্টের পথে। জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছি। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ১ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছিলাম। এগুলো শুধু গাড়ি ভাড়ায় খরচ হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত পরিবার ৬ লাখ টাকার বেশী খরচ করেছে। কিন্তু আর সম্ভব হচ্ছে না। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
মেহেদী হাসান নবাবের বাবা খোকন মিয়া বলেন, আমার ছেলে আন্দোলনে গিয়ে একটি চোখ হারিয়েছে। আরেকটি চোখ নষ্ট হচ্ছে। টাকার জন্য ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছি না।