বিশ্বের চলমান গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে যোগ দিয়েছে দেশের হাজারও তরুণ জলবায়ু কর্মীরা। জলবায়ু সুরক্ষা ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ, নবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণ ও টেকসই কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানায় হাজারেরও বেশি তরুণ জলবায়ু আন্দোলনকারীরা। এই বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট থেকে টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে জলবায়ুর জন্য ক্ষতিকর ও ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ করতে বিশ্ব নেতাদের কাছে দাবি জানানো হয়। একইসাথে ফিলিস্তিনে চলমান অমানবিক যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হবে।
শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় সংসদের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ সড়কে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ-এর যুব প্ল্যাটফর্ম এক্টিভিস্টা বাংলাদেশের সহযোগিতায় আয়োজিত সমাবেশ থেকে বিশ্বনেতাদের কাছে এই আহ্বান জানানো হয়।
রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সমাবেশ শেষে খামাড় বাড়ি থেকে র্যালি শুরু করে আড়ংয়ের মোড় ঘুরে জাতীয় সংসদের সামনে দিয়ে আবার খামার বাড়ির সামনে অ্যাভিনিউয়ের সড়কে সমবেত হন জলবায়ু যোদ্ধারা। সেখানে জলবায়ু সুবিচারের দাবি জানিয়ে আন্দোলন কার্যক্রমের সমাপ্তি টানা হয়।
সমাবেশে জলবায়ু যোদ্ধারা জানান, উন্নত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট সৃষ্টি করছে। তারা নব্য ঔপনিবেশিক শোষণ, যুদ্ধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে এই পৃথিবীকে ধ্বংস করছে। পুঁজিবাদী মানসিকতা নিয়ে সর্বোচ্চ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকারীরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের মাধ্যমে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যেখানে মানুষের চেয়ে মুনাফাই মুখ্য। এটি পৃথিবীতে বাস্তুতন্ত্র এবং জলবায়ুকে মারাত্মকভাবে ধ্বংস করছে। ফলে, বিরূপ প্রভাব পড়ছে দক্ষিণের দেশগুলোর তরুণ, কৃষক, নারী এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলোতে। এটি অনুন্নত দেশগুলোর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের কাছে তাদের পরিবেশগত ঋণ বহুগুণ বাড়িয়ে তুলছে। এই অবস্থায় জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে টেকসই প্রকল্প এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আহ্বান এসেছে গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে।
জলবায়ু সংকট নিরসন, এই বিষয়ে ন্যায়বিচার দাবি ও জনগণকে সচেতন করতে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ও এক্টিভিস্টা বাংলাদেশসহ ১৮ জেলার ৩৩টি যুব সংগঠনের তিন হাজারের অধিক জলবায়ু কর্মী এই স্ট্রাইকে অংশ নেন। একইসময় সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, সিলেট, কুষ্টিয়া, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, পটুয়াখালী, টেকনাফ, বান্দরবান, বরগুনা ও নারায়ণগঞ্জসহ লোকাল রাইটস প্রোগ্রাম (এলআরপি) এবং বেশ কিছু লোকাল ইয়ুথ হাবের তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরাও গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে সংহতি প্রকাশ করেন।
শান্তিপূর্ণ ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে তরুণ জলবায়ু কর্মীরা স্লোগান, প্ল্যাকার্ড, চিত্রকর্ম, গান, নাটক এবং পোস্টার প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে জলবায়ু সুবিচারের দাবি জানান। এসময় এখনই জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে এই মর্মে ‘ডোন্ট সেল আওয়ার ফিউচার’ ‘ফিক্স দ্য ফাইন্যান্স’, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করো’, ‘ক্ষতিকারক কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ বন্ধ করো’, ‘ক্লাইমেট জাস্টিস নাউ’ এবং ‘জলবায়ু সহনশীল টেকসই কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ করুন’সহ ইত্যাদি লেখা ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান নেন স্ট্রাইকে যোগ দেওয়া জলবায়ু আন্দোলনকারীরা।
তরুণ জলবায়ু অধিকারকর্মী সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘আমরা যদি এখনই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হই, তাহলে একদিন এর ভয়াবহ পরিণতি মানবজাতির অস্তিত্ব পর্যন্ত মুছে দিতে পারে। তাই এখনই কাজ করার সময় – এখনই সময়, না হলে আর কখনোই নয়।’
ঢাকা থেকে আরেক অধিকারকর্মী রোকন আহমেদ তার বক্তব্যে জলবায়ু সুবিচার আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট শুধু পরিবেশের জন্য নয়, এটি সুবিচার, সমতা এবং একটি টেকসই পৃথিবীর জন্য আমাদের সম্মিলিত লড়াই। আমরা চিৎকার করে বলতে চাই, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ বেচে দেবেন না!’ জলবায়ু সংকট এখন একটি মহামারিতে পরিণত হয়েছে! প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, বিপন্ন প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে। আমরা আজ শুধু প্রতিবাদ করছি না, জরুরি পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি। সরকার ও কর্পোরেট নেতাদের অবশ্যই জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি ও বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে মনোযোগ দিতে হবে। কারণ আমরা যদি আজ পৃথিবীকে না বাঁচাই, তবে আগামীকাল আমাদের জন্য অনেক দেরি হয়ে যাবে।’
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ এর ইয়াং পিপল টিম লিড মো: নাজমুল আহসান বলেন, ‘এবার তরুণরা জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারকদের জবাবদিহি করতে সোচ্চার হয়েছে। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ তাদের দাবির সাথে দৃঢ় সংহতি প্রকাশ করে এবং জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও কৃষি বান্ধব পরিবেশের জন্য টেকসই বিনিয়োগের দাবিতে তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করছে।’ বৈশ্বিক উত্তরের দেশগুলোর প্রতি জলবায়ু সুবিচার নিশ্চিত করতে এবং সবুজ রূপান্তরকে উৎসাহিত করার জন্য প্রযুক্তি ও জ্ঞান বিনিময়ের আহ্বান জানান তিনি।
এসময় ফিলিস্তিনে চলমান অমানবিক যুদ্ধ বন্ধে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়। যুদ্ধে অসংখ্য শিশু, নারী ও বৃদ্ধের মৃত্যুতে গভীর সহানুভূতি ও শোক প্রকাশ করা হয়।