
রাফাহ ধ্বংসস্তূপ। গাজাও ধ্বংসের পথে। প্রতিটি মানুষকে মেরে ফেলার পণ নিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে দখলদার ইসরাইল। আল আকসার ভূমিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার এই মিশন দেখে ফুঁসে উঠেছে সারা বিশ্ব। থেমে নেই বাংলার চিত্রজগতের তারকারাও। ফেসবুকে রেসট্রিকশন, ভবিষ্যতে মার্কিন ভিসা না পাওয়ার সম্ভাবনা ও ভারতের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়কে উড়িয়ে দিয়ে তারকারা লিখছেন তাদের ওয়ালে। শেয়ার করছেন গাজায় বোমা বর্ষণের ভিডিও। প্রতিবাদ জানাচ্ছেন দখলদারিত্বের, সংহতি জানাচ্ছেন ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি।
বাংলা সিনেমার সুপার স্টার শাকিব খান তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গাজা শুধু একটি ভৌগোলিক নাম নয়, এটি যেন আজ নির্যাতিত মানুষের প্রতীক! দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছু করতে না পারা! তাদের পাশে আছি- ভালোবাসা, সংহতি আর শান্তির প্রত্যাশায়।’ একই লেখা তিনি আন্তর্জাতিক দর্শকের জন্য ইংরেজিতেও পোস্ট করেছেন।
গাজা প্রশ্নে চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ এক কাঠি সরেস। ঈদ ইত্যাদিতে তিনি গান গেয়েছিলেন। ইত্যাদির মতো জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে অংশ নেন বুকের বাম পাশে ফিলিস্তিনি পতাকার রঙে আঁকা কবুতর নিয়ে। সঙ্গে লেখা, ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’। সিয়াম আহমেদ তার ফেসবুক আইডিতে গাজার পক্ষে লিখছেন। এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি যখন এই পোস্ট লিখছি ততক্ষণে গাজার অস্তিত্ব কি মুছে গেছে? আমরা কি পারলাম না এই শহরটাকে, এই দেশটাকে বাঁচাতে? ফিলিস্তিনের এই ধ্বংসাবশেষের দায় কি আমরা কেউ এড়াতে পারব? ফিলিস্তিনের জন্য আমার মনের কান্না কখনো থামাতে পারিনি।’
ফিলিস্তিনি শিশুদের প্রসঙ্গ টেনে সিয়াম আহমেদ লেখেন, “যখন ‘জংলি’র গল্প লেখা হচ্ছিল তখনো পাখির জায়গায় আমি বারবার ফিলিস্তিনি শিশুদেরই কল্পনা করতাম। আমরা কি শিশুদের জন্য একটা সুন্দর পৃথিবী উপহার দিয়ে যেতে পারব না? যখন যুদ্ধবিরতি চলছিল তখনো আমি শান্তি পাচ্ছিলাম না। শুধু মনে হতো, এই বিরতি কতক্ষণের? কতক্ষণ এই মানুষগুলো বাঁচবে আসলে? এই যে ঈদের পরপরই তাদের ওপর নরক নেমে আসলো, তার দায় কি এই পৃথিবী নেবে না? এই ওয়ার্ল্ড লিডারস, ইসলামিক স্কলারস, নোবেল লরিয়েটস, সাধারণ মানুষ, আমরা কেউ কি এড়াতে পারব এর দায়? আল্লাহ, তুমি জান্নাতের দরজা খুলে দাও। এই পৃথিবী আর গাজাবাসীর জন্য নয়। আমরা পারিনি, আমরা পারলাম না।”
চিত্রনায়িকা শবনম ইয়াসমিন বুবলী গাজার ধ্বংসস্তূপের ছবি পোস্ট করে দুই হাত তুলে মোনাজাতের ইমোজি দিয়ে লিখেছেন, ‘আল্লাহ সহায় হোন।’ আরেফিন শুভ লিখেছেন, ‘গাজার আকাশের যে ধোঁয়া আর অশ্রুর বৃষ্টি সেই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে আমরা শুধু প্রার্থনা করতে পারি, কাঁদতে পারি, আর চিৎকার করতে পারি। এই মানুষগুলোর অপরাধ কি শুধু এই যে, তারা নিজেদের মাটিতে বাঁচতে চায়?’
চিত্রনায়ক নিরব গাজা নিয়ে দুটি হাদিস পোস্ট করেছেন। পোস্টে লিখেছেন, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, খোরাসান দিক থেকে একদল মানুষ কালো পতাকা নিয়ে আগমন করবে। তারা এমনভাবে এগিয়ে আসবে যে, কেউ তাদের থামাতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত তারা বায়তুল মুকাদ্দাসে (জেরুজালেম) পৌঁছাবে এবং সেখানে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করবে।’
একই পোস্টে লেখেন, ‘আরেকটি হাদিসে এসেছে, তোমরা যখন খোরাসান দিক থেকে কালো পতাকা আসতে দেখবে, তখন বরফের ওপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাদের সঙ্গে যোগ দিও, কারণ তাদের মধ্যেই থাকবেন আল্লাহর খলিফা ইমাম মাহদি…।’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা ওয়াহিদুজ্জামান ডায়মন্ড লিখেছেন, ‘এমন নৃশংসতা দেখেও সারা বিশ্বের মুসলমানদের নীরব থাকা মানে নেতানিয়াহুর জঘন্য বর্বরোচিত মুসলিম হত্যাযজ্ঞকে সমর্থন করার সমতুল্য।’
তিনি আরেক পোস্টে লেখেন, ‘হে মুসলমান জাতি। তোমরা তোমাদের ভাইবোন সন্তানদের বিভীষিকাময় ভয়ংকর মৃত্যু দেখছ। অথচ ক্ষমতা থাকার পরও নীরব আছো প্রতিবাদ করো না তোমাদের ওপর আল্লাহর লানত বর্ষিত। ভেবো না তোমরা শান্তিতে থাকবে হয়তো এর থেকেও ভয়ংকর পরিণতি তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।’
চিত্র নায়িকা জয়া আহসান লাগাতার পোস্ট দিয়েছেন গাজা নিয়ে। এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘হ্যাঁ! অবশ্যই সংহতি ইসরাইলি দখলদারিত্ব ও গণহত্যার বিরুদ্ধে।’ আরেক পোস্টে লিখেছেন, ‘দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি সেনারা ১৫ জন জরুরি চিকিৎসাকর্মীকে হত্যা করেছে। গাজায় যে নিষ্ঠুর আর হৃদয়হীন গণহত্যা ইসরাইল চালিয়ে আসছে, এটা তারই অংশ। পৃথিবীকে তারা ফিলিস্তিনিশূন্য করার নিয়ত নিয়ে নেমেছে। বিশ্ববাসীর প্রতিবাদে ইসরায়েল ভ্রূক্ষেপ করবে না, সেটা জানি। কিন্তু বাকি বিশ্ব? বিশ্বের বড় বড় নেতা? এভাবে বেশুমার শিশুহত্যা, নারী হত্যা, গণহত্যা সবার চোখের সামনে চলতে থাকবে? মানুষের হৃদয়ের ওপর থেকে পর্দা সরুক। ফিলিস্তিনিরা মানুষের মতো বাঁচার সুযোগ পাক।’
গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলী ফিলিস্তিনি পঙ্গু শহীদ যোদ্ধা ফাদি আবু সালাহকে নিয়ে তার লেখা বিখ্যাত কবিতা ‘ফাতি আবু সালাহ’ পোস্ট করেছেন।
নির্মাতা মাবরুর রশিদ বান্নাহ ক্রমাগত পোস্ট করে যাচ্ছেন গাজা নিয়ে। ইজরাইলি হত্যাযজ্ঞের ছবি ভিডিও পোস্ট করছেন তার ওয়ালে। এ ছাড়া সারা বিশ্বে ফিলিস্তিনের পক্ষে যে আন্দোলনগুলো হয়েছে সে আন্দোলনের ভিডিও তিনি শেয়ার করেছেন তার ওয়ালে।
নির্মাতা রাশিদ পলাশ লিখেছেন, ‘তারা পৃথিবীর বুক থেকে ফিলিস্তিনকে মুছে দিতে চাইবে অথচ যতবার তারা মুছতে চাইবে তাদের ভবিষ্যৎ মুছে যেতে যেতে ছোট হয়ে আসবে। কারণ, ফিলিস্তিনের পবিত্র মাটির হেফাজতকারী আল্লাহ রাব্বুল আলামিন! তবে এটাও মনে রাখা হবে- তোমরা যখন ফতোয়া জারি নিয়ে ব্যস্ত ছিলে, হাজারো অস্ত্র-সামরিক শক্তির পরও আফসোস করছিলে, লাখো লাশ দেখে নিন্দা বক্তব্য তুলেই উটের বিরিয়ানিতে ভুরিভোজ করছিলে, যখন তোমরা ইমাম মাহাদির আগমনের অপেক্ষা করছিলে- তখন ফিলিস্তিনের মানুষ তাদের শেষ দিনগুলো গুনছিল! শত্রুরা শপথ করেছিল, পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে মুছে দেবে এই পবিত্র ভূমিকে, তারা সেটাই করছে! কিন্তু মনে রাখা হবে- তোমরা এই দিনেও নিশ্চুপ ছিলে! মনে রাখা হবে তোমরা মুসলিম ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্টতর সম্প্রদায় ছিলে, নিকৃষ্ট মুসলিম ছিলে। মনে রাখা হবে, দেখানো হবে হাশরের বড় পর্দাতে।’
নির্মাতা খিজির হায়াত খান লিখেছেন, ‘প্যালেস্টাইন ঘিরে আছে অসংখ্য মুসলিম রাষ্ট্র, অথচ সবাই নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাজার ওপর চলা এই নৃশংসতার সামনে। কখনো কখনো নিজের মুসলিম পরিচয় নিয়ে লজ্জা হয় আমার।’
গাজা থেকে ডাক দেওয়া বিশ্বব্যাপী হরতালের প্রতি সংহতি জানিয়ে নির্মাতা অনন্য মামুন লিখেছেন, ‘আজ কোনো কাজ না, একটা দিন নির্যাতিত, মানুষের পাশে থাকার জন্য।’
গীতিকবি সোমেশ্বর অলি লিখেছেন, ‘ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলের বর্বর হামলায় আরও অর্ধশতাধিক নিহত হয়েছেন। এতে করে ভূখণ্ডটিতে ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার ৭০০ জনে পৌঁছেছে। সোমবার (গতকাল) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।’
ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে অভিনেত্রী কাজী নওশাবা তার টাইমলাইনে বেশ কয়েকটি পোস্ট করেছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের ছবিও শেয়ার করেছেন নওশাবা।
এ ছাড়া ছোট-বড় অনেক তারকাই তাদের ওয়ালে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে পোস্ট করেছেন। আবার অনেক নামিদামি তারকা নিজেদের নাটক, সিনেমা, রিলস ইত্যাদি নিয়ে পোস্ট করেছেন। তাদের সামাজিক মাধ্যমের কর্মকাণ্ড দেখে বোঝার উপায় নেই বিশ্বে এত বড় একটি সংকট চলমান।