বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ থেকে বের হওয়া ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’য় এবার লোকজ সংস্কৃতিসহ প্রতিবাদ ও সংহতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে নানা মোটিফ রাখা হয়েছে।

সোমবার সকাল ৯টায় চারুকলার সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়। এটি প্রথমে শাহবাগ হয়ে টিএসসি হয়ে শহীদ মিনার যাবে। পরে সেখান থেকে দোয়েল চত্বর দিয়ে বাংলা একাডেমির সামনে দিয়ে পুনরায় চারুকলায় গিয়ে শেষ হবে।

শোভাযাত্রায় প্রধান মোটিফ হিসেবে ফ্যাসিবাদীর দানবীয় প্রতিকৃতি রাখা হয়েছে। এটি মূলত দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার মুখাবয়বের দানবীয় ও ভয়ানক প্রতিকৃতি। ১৬ ফিট উচ্চতার এই মোটিফটি বানানো হয়েছে কাঠ, বোর্ড এবং থার্মোকল (শোলা) দিয়ে বানানো হয়েছে। এর আগে বাঁশ ও কাগজ দিয়ে ২০ ফিট উচ্চতার মোটিফটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে দুদিন হাতে রেখে চারুকলার সাবেক ও বর্তমান শিল্পীরা শোলা দিয়ে বর্তমান মোটিফটি তৈরি করেন।
গত বছরের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি ধারণ করে মুগ্ধর পানির বোতল মোটিফ হিসেবে রাখা হয়েছে। এছাড়াও সাদা কালো ও লাল রংয়ের সমন্বয়ে ‘৩৬ জুলাই’ টাইপোগ্রাফি রয়েছে মোটিফের তালিকায়।

স্বাধীন ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর হামলার প্রতিবাদ ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে তরমুজের ফালি অন্যতম আকর্ষণীয় মোটিফ হিসেবে রাখা হয়েছে। তরমুজের ভেতরের অংশের রং কালো, সাদা ও লাল। যা ফিলিস্তিনের পতাকার সাথে মিল রয়েছে। ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মুসলমানদের লড়াই সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানিয়ে এই মোটিফটি শোভাযাত্রায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷
এছাড়াও শান্তির প্রতীক হিসেবে পায়রা, লোকজ সংস্কৃতি হিসেবে বাঘ, ইলিশ মাছ, ও পালকি রয়েছে শোভাযাত্রায়। এসব মোটিফ ঠেলাগাড়ির ওপরে নেওয়া হয়েছে।

এর বাইরেও মাঝারি আকারের মোটিফের মধ্যে রয়েছে সুলতানি ও মুঘোল আমলের শাসকদের মুখোশ, তালপাতার সেপাই, রঙিন চরকি, পাখা, ঘোড়া, তুহিন পাখি ও শতফুট উচ্চতার লোকজ চিত্রাবলীর ক্যানভাস।
ছোট মোটিফ হিসেবে শোভাযাত্রায় ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, এছাড়াও লোকজ সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বাঘের মাথা, পলো, মাছের চাই, মাথাল, লাঙল ও মাছের ডোলা রয়েছে। মোটিফ ছাড়াও শোভাযাত্রার আগে পুলিশ বাহিনীর আটটি সুসজ্জিত ঘোড়ার সারি রয়েছে।
শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংস্কৃতিমনা নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। নববর্ষ ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।