মাদারগঞ্জ (জামালপুর): জুলাই আন্দোলনে যাওয়া আগে রাতে ফোন করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে মাকে দোয়া করতে বলেছিলেন মোহাম্মদ শহীদ হোসেন। বলেছিলেন, সকালে আবার কথা হবে। সকাল ঠিকই হয়েছে কিন্তু ছেলের সঙ্গে আর কথা হয়নি মা সুন্দরী বেগমের।
তিনি আর শোনেননি প্রিয় ছেলের কণ্ঠ। যদিও সকালে ছেলের নম্বর থেকে একটি কল এসেছিল। রিসিভ করার পর অপরিচিত একটি কণ্ঠ তাকে জানায়, তার ছেলে আর নেই। জুলাই বিপ্লবে শাহাদতবরণকারী মোহাম্মদ শহীদের মা কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
মোহাম্মদ শহীদ জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার সিধুলী ইউনিয়নের মদনগোপাল পশ্চিমপাড়া এলাকার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে। বয়স হয়েছিল ২৫ বছর। মা সুন্দরী বেগম গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়।
পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র আশা-ভরসা। তিনি মুন্সীগঞ্জের সরকারি হরগঙ্গা কলেজে সমাজকর্ম বিভাগে মাস্টার্সে পড়তেন।
জানা যায়, জুলাইয়ের গণআন্দোলনে সম্মুখসারিতে ছিলেন মোহাম্মদ শহীদ। স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে পুলিশে চাকরি করবেন। কিন্তু পুলিশের হাতেই তার স্বপ্ন ভাঙল। গত বছরের ২৭ জুলাই বন্ধুদের সঙ্গে ঢাকার বিমানবন্দরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সম্মুখসারিতে অংশ নেন তিনি। সেদিন ছাত্র-জনতার ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জ, গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। পুলিশের লাঠিচার্জে গুরুতর আহত হন তিনি। সহপাঠীরা তাকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পঞ্চবটি এলাকায় বাসায় নেওয়ার পরই তার মৃত্যু হয়। পরদিন ২৮ জুলাই পবিরারে সদস্যরা তার লাশ গ্রামের বাড়ি নিয়ে দাফন করেন।
ছেলের মৃত্যু নির্বাক করে দিয়েছে বিধাব সুন্দরী বেগমকে। মোহাম্মদ শহীদের বিষয়ে কথা তুলতেই হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেন। বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘২০০৬ সালে শহীদের বাবা মারা গেছে। অনেক কষ্ট করে লেখাপাড়া করাইছি ছেলেরে। অনেক আশা ছিল ছেলে একদিন বড় কিছু হবে। আমার ছেলেরও স্বপ্ন ছিল পুলিশের এসআই হবে।
পরিবারের হাল ধরবে। মৃত্যুর আগের দিন ফোন করে শহীদ বলেছিলÑ মা তোমাকে সুখ দিতে যা করা লাগবে, তাই করব। ২৭ জুলাই দিনের বেলায় ঢাকার বিমানবন্দরে আন্দোলন করে, সেদিন রাতেই সে মারা যায়। শহীদের পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। বাম পাশের শরীর পুড়ে গিয়েছিল, গ্যাসে পেট ফুলে গিয়েছিল।’
সুন্দরী বেগম আরো বলেন, ‘ছেলের কথা মনে হলেই বুকটা হাহাকার করে ওঠে। অনেকে সান্ত্বনা দেন, পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাসও দেন। সরকার অর্থনৈতিক সাহায্যের পাশাপাশি আমার আরেক ছেলেকে যদি সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে আমাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরবে।’