পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলাধীন লেবুখালী ইউনিয়নের কার্তিকপাশা গ্রামে মনিরের বাড়ি। কাজ করতেন গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায়। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন চৌরাস্তা এলাকায়।
জানা যায়, পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দেন মনির। ২০ জুলাই গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় দুই পায়েই গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানের দুই পা পঙ্গু হওয়ায় এখন দিশাহারা পুরো পরিবার।
বাবা আলমগীর হোসেন বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার ২ ঘণ্টা আগেও ছেলের সঙ্গে আমার মোবাইলে কথা হয়। আমি বলেছি, বাবা তুমি বাসা থেকে বের হইও না । এর মধ্যেই খবর পেলাম আমার একমাত্র ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আমার চাচাতো ভাইয়েরা আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। সন্তানের এত বড় দুঃসংবাদ শুনে বাড়িতে বসে চিৎকার করে কাঁদতেও পারিনি। ওর মা এই সংবাদ শোনার পর অজ্ঞান হয়ে যান। আজ পর্যন্ত তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি।
মনিরের বাবা আরো বলেন, ওর মাকে নিয়ে যে ঢাকায় যাবÑ এমন সামর্থ্য ছিল না । ৫ দিন পর অনেক কষ্ট করে ঢাকায় গিয়ে দেখলাম সন্তান দুই পায়েই গুলিবিদ্ধ। এ করুণ দৃশ্য এখনো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মনিরের চিকিৎসা খরচ চালাতে নিজের সব সম্বল শেষ করে ফেলেছি। এখন সরকারিভাবে চিকিৎসা করানো হলেও দুজন লোক হাসপাতালে থাকতে হয়। তাদের আসা-যাওয়া, খাবার খরচ আমাকেই চালাতে হয়। মনিরের স্ত্রী ও তিন বছরের ছেলে এখনও গাজীপুরের বাসাতেই থাকে।
আলমগীর হোসেন আরো বলেন, একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেটি দুই পা হারিয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। ওর স্ত্রী-সন্তানের ভরণ-পোষণ, গ্রামের বাড়িতে আমাদের খরচ নির্বাহ করতে গিয়ে আমি ও আমার স্ত্রী নিদ্রাহীন রাত কাটাচ্ছি। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকার অনুদান ও কজন বিত্তশালীর সহযোগিতা পেলেও এরই মধ্যে তা খরচ হয়ে গেছে।
মনির আমার দেশকে বলেন, আগের চেয়ে একটু ভালো মনে হচ্ছে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, স্বাভাবিক জীবনে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রতিদিন আমার সঙ্গে দু-তিনজন লোক হাসপাতালে থাকতে হয়। তাদের খাবারই জোগাড় করতে পারি না। উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় পরিবার নিয়েও আছি বিপদে। তিন বছরের ছেলে ইসমাইলের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। ওর অন্ধকার ভবিষ্যতের কথা ভেবে দিনে দিনে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছি। আমার পুরো পরিবার এখন দিশাহারা।
আহত মনিরের দাবি, সরকার যেন তার পরিবারের সদস্যদের মাসিক একটা ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করে, যা দিয়ে তারা চলতে পারবে।
আ.লীগ নেতাদের ভয়ে ছেলের জন্য কাঁদতেও পারেননি বাবা
Next Article দুই উপদেষ্টার এপিএস-পিও’র দুর্নীতির খোঁজে গোয়েন্দা
Related Posts
Add A Comment