স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও দেশের পুঁজিবাজার স্বাভাবিক গতি ফিরে পায়নি। গণ-অভ্যুত্থানের পর শেয়ারবাজারে ইতিবাচক পরিবর্তনের আশায় বিনিয়োগকারী ও অংশীজনরা বড় প্রত্যাশা করেছিলেন, কিন্তু পরিস্থিতি এখন হতাশাজনক। অনেকেই বড় লোকসান দিয়ে পুঁজিবাজার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন।
প্রধান হতাশার কারণ হলো পূর্বের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিচার এখনও দৃশ্যমান হয়নি। বিএসইসি শুধু জরিমানা করছে, কিন্তু শেয়ার কারসাজি বন্ধ হয়নি। ফলে আস্থার সংকট চরমে পৌঁছেছে। সংস্কারের ঘোষণার পরও বাস্তবে তেমন কোনো প্রতিফলন হয়নি বাজারে। এর ফলে হাজার হাজার বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে বাজার ছাড়ছেন, আইপিও বাজারও ‘গড়ের মাঠ’ হয়ে পড়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), যাদের বাজারের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার কথা ছিল, তাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে সংকট তৈরি হয়েছে।
পরিবর্তনের সূচনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায়িত্ব নেওয়া বর্তমান বিএসইসি এখন গভীর সংকটে রয়েছে। এর মধ্যে গত ৫ মার্চ বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে এবং এ ঘটনায় ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ আরও অনেক কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারেন উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। এখন কমিশন নতুন করে তাদের কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত তথ্য চেয়ে নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। কর্মকর্তারা জানতে চাচ্ছেন, এই তথ্যের মাধ্যমে কমিশন কী করতে চায়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশিদ লালী বলেছেন, শেয়ারবাজারে ভয়াবহ আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং গত আট মাসে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়নি। তাত্ত্বিক আলোচনা না করে বাস্তবতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বুধবার (১৯ এপ্রিল) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আট কার্যদিবসের মধ্যে সবচেয়ে কম লেনদেন হয়েছে। প্রায় সব খাতের শেয়ার
দরপতন হয়েছে এবং মূল্যসূচক কমেছে। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই অবস্থা দেখা গেছে, যেখানে লেনদেন কমেছে এবং সব মূল্যসূচক নিম্নমুখী হয়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১০৫ পয়েন্টে নেমেছে। সিএসইর সূচকও কমে ৪৮ পয়েন্ট, লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৯৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা।